আবু জায়েদের ‘শিশুসুলভ’ আচরণে শেষ হলো বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তার রান আউটে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ২৩৩ রানে। মোহাম্মদ মিঠুনের ৬৩ রানই রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের হাইলাইটস। সফরকারীদের ইনিংসের পর আলোর স্বল্পতায় শেষ হয়ে যায় প্রথম দিনের খেলা। আগামীকাল (শনিবার) সকালে ব্যাটিং শুরু করবে পাকিস্তান।
রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংস মোটেও ভালো কাটলো না বাংলাদেশের। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার ছবি ভেসে উঠলো আরেকবার। নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ কিংবা লিটন দাস ভালো শুরু করে বড় ইনিংসের ইঙ্গিত দিলেও হতাশা বাড়িয়ে গেছেন।
ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল মিঠুন। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে একপ্রান্ত আগলে রেখে চমৎকার ইনিংস খেলেছেন তিনি। যোগ্য সঙ্গ পেয়েছেন লোয়ার অর্ডারের তাইজুল ইসলামের কাছ থেকে। সপ্তম উইকেটে তাদের ৫৩ রানের জুটিতেই বাংলাদেশ সংগ্রহ অতদূর গিয়েছে। আবু জায়েদ খামখেয়ালি আচরণ না করলে বাংলাদেশের সংগ্রহ আরও একটু বাড়তেই পারতো। দাঁড়িয়ে থেকেও ক্রিজে ব্যাট ফেলতে পারেননি এই পেসার। মোহাম্মদ আব্বাসের থ্রো সরাসরি স্টাম্পে লাগলে তিনি রান আউট। এর ৩ বল আগেই ১৪০ বলে ৭ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৬৩ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মিঠুন।
হাফসেঞ্চুরির পরপরই ফিরে যান এই ব্যাটসম্যান। নাসিম শাহর বলে উইকেটকিপার মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি। ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দিলেও পাকিস্তানের নেওয়া রিভিউয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়েছে মিঠুনকে। নাসিমের বল তার গ্লাভসে হালকা ছোঁয়া দিয়ে কোমরে লেগে জমা পড়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে। তার আগে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পান তিনি। তার হাফসেঞ্চুরির ঠিক আগেই আউট হয়ে যান তাইজুল ইসলাম। চমৎকার ব্যাটিংয়ে মিঠুনকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন এই স্পিনার। স্পিনার হলেও লোয়ার অর্ডারে ব্যাটটা ভালোই করতে পারেন তাইজুল। পাকিস্তানি বোলারদের বেশ ভালোভাবেই সামলেছেন তিনি। হারিস সোহেলের বলে আউট হওয়ার আগে ৭২ বলে খেলে যান ২৪ রানের কার্যকরী ইনিংস।
প্রথম সেশনে বাংলাদেশ হারিয়েছিল ৩ উইকেট। দ্বিতীয় সেশনেও তিন ব্যাটসম্যানকে হারায়। তাতে প্রথম দিনের চা বিরতিতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের নেই ৬ উইকেট। লাঞ্চ থেকে ফিরেই আউট হয়ে যান শান্ত (৪৪)। এরপর ১০৭ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাহমুদউল্লাহ (২৫) ফেরার পর ৫০ ছাড়ানো জুটিতে প্রতিরোধ গড়েছিলেন লিটন ও মিঠুন।
আগের ওভারেই ইয়াসির শাহের বলে ২২ রানে মিঠুনের সহজ ক্যাচ ছাড়া হারিস সোহেল বল হাতে নেন ৫৫তম ওভারে। ওই আক্ষেপ তিনি মেটালেন প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়ে। খণ্ডকালীন বাঁহাতি স্পিনারের বলে লিটন পড়েন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া না দিলেও ম্যাচের দ্বিতীয় রিভিউ নিয়ে সফল স্বাগতিকরা, ভাঙে ৫৪ রানের জুটি। ৪৬ বলে ৭ চারে ৩৩ রান করেন বাংলাদেশের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
এর আগে ইনিংসের প্রথম ১০ বলেই বিদায় নেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও তামিম ইকবাল। ৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন মুমিনুল হক। তাকে উপযুক্ত সঙ্গ দেন শান্ত। ৩০ রানে মুমিনুল ফিরে গেলেও তিনি মাটি কামড়ে ছিলেন ক্রিজে। প্রথম হাফসেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে থাকতে গিয়েছিলেন লাঞ্চে, ফিরে এসে সেই ৪৪ রানেই আউট হয়ে যান তিনি। প্রথম সেশনের শুরুটা ছিল পাকিস্তানের। শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে আসাদ শফিককে ক্যাচ দেন সাইফ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেকে ‘ডাক’ মারেন তিনি! পরের ওভারে তামিমও আউট। মোহাম্মদ আব্বাসের এলবিডাব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার নাইজেল ডি লং সাড়া না দিলে পাকিস্তান রিভিউ নেয়। গত সপ্তাহে পূর্বাঞ্চলের হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে অপরাজিত ৩৩৪ রানের ইনিংস খেলা তামিম আউট মাত্র ৩ রানে। পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল বোলার শাহীন আফ্রিদি। বাঁহাতি পেসারের শিকার ৪ উইকেট। আর ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ আব্বাস ও হারিস সোহেল।